মো. মোজাম্মেল হক, টাঙ্গাইলঃ
অবৈধ ড্রেজার যুক্ত বালুভর্তি ভলগেট পরিবহনে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যমুনা ও ধলেশ্বরীল শাখার বংশাই নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজকালভার্ট, ফসলি জমি, হাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষার্তে ভলগেট বন্ধ করতে পাহাড়া দিয়ে যাচ্ছে গোড়াইল, চাকলেশ্বর, কুমারজানি, ফতেপুর, পুষ্টকামুরী এলাকার লোকজন। যখনই কোন অবৈধ বালুভর্তি ট্রলার আসে। তখনই তা ফেরতপাঠিয়ে দিচ্ছে এলাকাবাসী।
যে কোন সময় ঘটতে পারে মারামারিসহ আরও বড় ধরনের দূর্ঘটনা। পক্ষান্তরে সিন্ডিকেট বালু ব্যাসায়ীরা তাদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য নিরীহ মানুষেকে হয়রানির জন্য থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ।
জানাযায়, কতিপয় প্রভাবশালীদের মদদে দীর্ঘ দিনযাবৎ বালু ব্যবসায়ী একটি সিন্ডিকেট বালু ব্যবসা পরিচালনা করছে। সংঘবদ্ধ এ চক্রটির কারণে ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি চরম ভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। জীবনের ভয়ে এদের বিরোদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। ভলগেট ভর্তি বালু ব্যবসায়ীদের নিষেধ করলে পুলিশ, ডিবি, র্যাব ও মামলার ভয় দেখায় বলে জানা গেছে।
মির্জাপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বালু ব্যবসায়ী কবির সিকদার কয়েকজন লোক জন নিয়ে বালুভর্তি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল।
এলাকার মানুষের কথিত মূলে জানাযায় তারা অবৈধ বালু নিয়ে যাচ্ছিল। এতে এলাকার নদীর আশে পাশের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। তারা ভলগেট চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এতে যে কোন সময় অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটার বিদ্যমান আছে।
ভলগেট চালক ও শ্রমিক মিলন, আঃ ছবুর, মো. রজব বলেন, আমরা এই বালু বাসাইল থেকে লোড দিয়েছি। হাটু ভাঙ্গার কবির সিকদারের মাধ্যমে কালিয়কৈর যাবে।
এ ব্যাপারে কবির সিকদার বলেন, আমি কোন ভলগেটের বালুর বিষয়ে জানিনা। এমনকি এ ব্যবসার সাথে জড়িতনা।
মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার গুলোর দুর্ভোগের চিত্র।
পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলল রওশনারা বেগম, ভাদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজ হারুল ইসলাম, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, আজগানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানর ফিক সিকদার জানান, আমাদের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ বছর ভাঙ্গনের মাত্রা ব্যাপক আকার ধারন করছে। শুকনো ঋতুতে মাটি খেকোদের নদীর চরের মাটি কেটে বিক্রি আর বর্ষা মৌসুমে বংশাই নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই ডেজার যুক্ত ট্রলার নদীর বিভিন্ন স্থান হতে বালু উত্তোলন করে দ্রুত গতিতে অবৈধ বালু ভর্তি ট্রলার পরিবহনের কারনে তীব্র নদী ভাঙ্গনে রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, ঘর বাড়ি, ফসলি জমি, হাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনাসহ পৌরসভার একাব্বর হোসেন এমপি সেতু হুমকির মুখে। সেতুর পূর্ব পাশে ঘর বাড়ি গুলো নদী ভাঙ্গনের ফলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে ভূক্তভোগি ৪নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মজনু মিয়া (৪৫), আব্দুল খালেক (৬৫), বেগম (৫২), কদভানু (৬০), সুলতান (৬৭) এবং গাড়াইল, চাকেলেশ্বর, পুস্টকামুরী এলাকার বৈরি দাস, ঠাকুর মাস্টার, কার্তিক সাধু, পংকজ মাস্টার, দ্বিলীপ, গোপাল, হাবেল মৃধা, আমিনুর মিয়া, হিরো মৃধা, আশ্রাব মৃধা, সুলতান মিয়া, সোহেল দেওয়ানসহ আরও অর্ধ শতাধিক পরিবার। তাদের অভিযোগ তাদের ঘর বাড়ির জায়গা জমি প্রতি বছর বংশাই নদীর গ্রাস করেই যাচ্ছে কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি। তাই ঘর বাড়ি রক্ষার জন্য অবৈধ বালু ভর্তি ট্রলার পরিবহন বন্ধ করে অতি শিঘ্র ইজিও ব্যাগ স্থাপন করে বাধ নির্মান করে ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে সরকারের নিকট সাংবাদিকদের মাধ্যমে আবেদন জনিয়েছেন। একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার অভিযোগ করেছেন, নদী ভাঙ্গনে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ্য হলেও প্রশাসন থেকে তারা কোন সহায়তা পাননি। বিগত দিনে অবৈধ বালু ভর্তি ভল গেট পরিবহন বন্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
এতে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি এলাকাবাসীর ফসলি জমি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে আশে পাশের বসবাসকারী বাড়ি ঘর গুলো।
তারা আরো জানান, প্রতি বছর ভরা বন্যা মৌসুমে এই চক্রটি ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ভলগেট পরিবহনের মাধ্যমে বালু বিক্রি করে। ফলে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। বহু লোকজন ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব বালুভর্তি ভলগেট পরিবহন বন্ধ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
শুকনো ঋতুতে মাটিখেকোদের নদীর চরের মাটি কেটে বিক্রির মেলা আর বর্ষা মৌসুমে ডেজার যুক্ত ট্রলার নদীর বিভিন্ন স্থান হতে বালু উত্তোলন করে দ্রুত গতিতে অবৈধ বালু ভর্তি ট্রলার পরিবহনের কারনে তীব্র নদী ভাঙ্গনে রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, হাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলিন হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ্য কয়েক হাজার পরিবার দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন এমনকি উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, মির্জাপুর পৌরসভার কুমুরজানি এলাকার বংশাই নদীতে অবস্থিত আলহাজ্ব একাব্বর হোসেন এম পি সেতুর পূর্ব পাশের ঘর বাড়িগুলো ব্যপক ভাঙ্গনের বিষয়টি আমি জানি। কোন কারনে অসহায় পরিবারের ক্ষতি হয়। তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ববস্থা গ্রহন করা হবে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, বংশাই নদী দিয়ে বালু ভর্তি ভলগেট পরিবহনের বিষয়টি আমি শুনেছি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।