এস এম নাসির মাহমুদ,আমতলী(বরগুনা)প্রতিনিধিঃ
প্রতিটি সন্তানের কাছেই বাবা হচ্ছেন বটবৃক্ষ। কিন্তু সেই বাবাকেই অনেক সন্তান অবহেলায় দূরে ঠেলে দেয়। তখন বাবার জীবনে নেমে আসে অশেষ কষ্ট। যেই বাবা এত গভীর যত্নে লালন পালন করে বড় করেছেন সন্তানকে। আর সেই বাবার স্থান হয় যদি খোলা ফাঁকা ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে। তবে এর চেয়ে দুঃখের কিছু হতে পারে না।
শানু মৃধা বয়স ৮৫ বছর। বয়সের ভারে আর নানা রকম অসুখে তেমন হাঁটাচলা ও কাজকর্ম করতে পারেন না। প্রয়োজনীয় খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা-যত্ন না পাওয়ায় এখন তিনি অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। লোক দেখলেই বলে ‘ভাত দে বাবো মোরে এ্যাক প্লেট ভাত আইনা দে’ তার এই দুর্বিষহ জীবন দেখে আঁতকে ওঠেন প্রতিবেশীরা। এমনই এক নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের উত্তর কুকুয়া গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শানু মৃধার একসময় জমি জমার কমতি ছিল না। দুই ছেলে আর তিন মেয়ে রয়েছে তার। শানু মৃধা বৃদ্ধ হওয়ায় ছোট ভাই ও বোনদের সম্পত্তি না দিয়ে কৌশল করে বড় ছেলে সুলতানা মৃধা সব সম্পত্তি লিখে দেন। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরনের কারণে কোনো ধরনের চিকিৎসা না করে প্রায় এক বছর ধরে তাকে ফেলে রেখেছেন ফাঁকা ঝুপড়ি ঘরে।
প্রতিবেশী কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজন মাফিক খাবার, সুচিকিৎসা, সেবা-যত্ন না পাওয়ায় শানু মৃধা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলে সুলতানা মৃধা যে পরিমাণ খাবার দেয়, তাতে তার ক্ষুধা পূরণ হয় না। এই কারণে যে মানুষই তার পাশে দিয়ে যাতায়াত করে তখনই চিৎকার করে বলে ‘বাবো মোরে এ্যাক প্লেট ভাত দে’ শুনে খুব কষ্ট লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা সেকান্দর বেপারী জানান, শানু মৃধাকে পরিবারের কেউ ভালোভাবে দেখাশোনা করে না। ছেলের কাছে খাবার চাইলেই তাকে করা হয় মারধোর। ঝুপড়ি ঘরের চৌকিতেই তাকে মশার কামড়ে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে থাকতে হয়। অসহায়ভাবে পেট ভরে খেতে না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভালো সেবা-যত্ন, চিকিৎসা,পর্যাপ্ত খাবার পেলে হয়তোবা ভালোও হতে পারেন শানু।
এ বিষয়ে বড় ছেলে সুলতানা মৃধা মারধর ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, জমি লিখে নেয়নি। টাকার বিনিময়ে জমির দলিল দিয়েছেন।এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও দেখে রাতেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। তিনি সেখানে যাবেন, বিষয়টি সত্যিকার অর্থে যদি এমন হয় তাহলে আমরা ওই ব্যক্তির বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।