আবুল কাশেম রুমন,সিলেটঃ
সিলেটে ৩৬ ঘন্টায় ৪৬৫ দশমিক ২ মিলিমটিার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নগর জুড়ে অনেকে বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।
এ দিকে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আর শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ১০৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ৩৬ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৪৬৫ দশমিক ২ মিলিমটিার বৃষ্টি। এটা অতিভারী বৃষ্টি। অথচ অক্টোবরে সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ২২৩ মিলিমিটার। তার মানে এটি অস্বাভাবিক ও রেকর্ড বৃষ্টি।
আর দুই দিনের এই অবিরাম বৃষ্টিতে নগরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শনিবার নগরের অর্ধশতাধিক এলাকাই পানিতে তলিয়ে যায়। সড়ক, বাসাবাড়ি, দোকান পাট সব ছিলো পানিতে একাকার। পানি ঢুকে পড়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি আর দোকানে পানি জমে যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি ছিলো অবর্ণনীয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের রায়নগর, উপশহর, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, কাজলশাহ, শেখঘাট, বনকলাপাড়া, কালীঘাট, পীরমহল্লা, সেনপাড়া, আদিত্যপাড়া, কেওয়াপাড়া, পায়রা, দরগাগেট, চৌহাট্টা, মেজরটিলা প্যারাগন আবাসিক এলাকা, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড়, দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ অসংখ্য এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসায় পানি ঢুকেছে। এসব এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও নিচতলায় পানি জমে হাঁটু সমান। ফলে রোগী, তাদের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ভোগের শেষ ছিলো না।
হাসপাতালের চিকিৎসক অরূপ রাউৎ শনিবার সকালে জানান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এবং সকল ছাত্রাবাসের নিচতলা অবধি পানি উঠে গেছে। হাসপাতালের সামনের সড়কও জলের নিচে। হাঁটু পানি ভেঙেই ডাক্তাররা ডিউটিতে এসেছেন।
নগরের অন্যতম উঁচু এলাকা শাহী ঈদগাহ। শুক্রবার রাতেই এই এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। এই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, রাতেই বাসায় পানি ঢুকেছে। সময় সময় পানি বাড়ছে। এ নিয়ে চলতি বছরে তিনবার ঘরে পানি ঢুকলো। রায়নগর সোনারপাড়া এলাকার আব্দুর রব সায়েম জানান, রাত থেকেই স্রোতের মতো তাদের এলাকার বাসা-বাড়ীতে পানি ঢুকে পড়ে। হঠাৎ ঘরে পানি প্রবেশ করায় মানুষজন অন্তহীন দুর্ভোগে পড়েন।
ভোরে নিজ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করর্পোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তার নিজের বাসাও ছিলো জলমগ্ন। ভিডিওতে দেখা যায়- ফরহাদ চৌধুরীর বাসার নিচ তলায় পানি থৈ থৈ করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে পানিতে।
শামীম বলেন, সিটি করর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরের ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও আমাদেরকে ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।
পানিতে তলিয়ে যায় নগরের হাওয়াপাড়া মসজিদ। স্থানীয়রা জানান, মসজিদে পানি প্রবেশ করায় সেখানে ফজরের নামায আদায় সম্ভব হয়নি। মেজরটিলা প্যারাগন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এক কলেজ শিক্ষক বলেন, টানা বৃষ্টি চলায় এখন নগরের অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায়ও যে সব এলাকায় পানি ওঠেনি, এমন উঁচু এলাকায়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এলাকাটি এ রকমই একটি। এখানে অনেক বাসাবাড়িতে পানি ওঠার পাশাপাশি রাস্তাও ডুবেছে।
ভুক্তভোগী বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, প্রধানত চারটি কারণে নগরে অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই এখন জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এর প্রধান কারণ বুক চিরে প্রবাহিত সুরমা নদীর নাব্যতা হারানো। এছাড়া নগরের ছড়াগুলোয় (প্রাকৃতিক খাল) অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ, অনেক ড্রেনের উন্নয়ন কাজ ধীরগতিতে চলায় পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হয়ে পড়া এবং ছড়া-নর্দমার তলদেশে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকা মুল কারণ।