দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধিঃ
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে ঈদ মানে একটু ভালো খাবার, একটা নতুন পোশাক। কিন্ত ফান্দা আবাসনের চিত্র উল্টো। ঈদের দিনেও কাজ করতে দেখা যায় অনেক শিশুকে। শিশুদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় না, কিন্তু সবারই কি সেই সৌভাগ্য হয়? ওই আবাসনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঈদ কখনো আনন্দের আবার কখনো বেদনার। ভালো খাবার আর নতুন পোষাক তো দুরের কথা আবাসেন বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মনেই হয় না আজ ঈদ।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ২নং সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ফান্দা আবাসন। ওই গ্রামে মুজিববর্ষের ২৫টি ঘর ইতোমধ্যে উদ্ভোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘর গুলোতে নানা পেশার বেশকিছু হতদরিদ্র পরিবার বসবাস করছেন। এবার ঈদ আনন্দে ওইসকল পরিবারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে মুজিব বর্ষের পাওয়া নতুন ঘর গুলো। ওই ঘরে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের এক অন্যরকম ঈদ আনন্দ দিলেন ইউএনও রাজীব-উল-আহসান।
সোমবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে এমনটিই দেখা গেছে। এ সময় সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফুল ইসলাম, কৃষি অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান, একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিগন, শিশুদের অভিভাবকগন উপস্থিত ছিলেন।
সুবিধা বঞ্চিত শিশু ফাতেমা জানায়, ঈদ কি আমরা জানিনা, কবে ঈদ গেছে তাও জানিনা, তবে মনে অইতাছে আইজ আমরার ঈদ। সার আমরার লাগি লাল বেলুন, মিষ্টি, চলকেট (চকলেট), চিপসু (চিপস্), দিছে, সবারে কাছে নিয়া খাওয়াইয়া দিছে, আইজই আমরা ঈদ, এ কথা গুলো বলে বেলুন নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো আপন মনে।
মুজিবর্ষের ঘরপ্রাপ্ত রমিজা খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘‘টেউনু সাইব আইজ আমরা হোলাহানের লাগিন মিষ্টি, লজেন, চিপস এইতা আইন্যা নিজ হাতে মুহে তুইল্যা দিতাছইন, মনডা কইতাছে আইজ আমরার ঈদ’’ সারাটা জীবনভর মাইনশের বাড়িত লাত্থি গুতা খাইয়া এই বাড়ি হেই বাড়ির বারিন্দাত, ইস্কুল ঘরের বারিন্দাত রাইত কাডাইছি। এইবার নিজের ঘরেই আমরা ঈদ করতে হারছি। শেকের বেডি, শেখ হাসিনার লাগিন দোয়া করি হেইলা বাইচ্চা থাউক।
দিনমজুর আকবর হোসেন বলেন, আমাদের মতো গরিবের আলাদা কোন ঈদ আয়োজন নাই। বাচ্চাদের ভালো খাবার, নতুন জামা দিতে পারি নাই, কাজেই আমাদের কাছে সব দিনই সমান। আজ ইউএনও সার আমাদের বাচ্চাদের নিয়া ঈদের আনন্দ দেয়ার আয়োজন করছে, তা দেখে ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা সুবিধা বঞ্চিত না, হয়তো আমরাও একদিন ঘুরে দাড়াবো। জীবনের পুরো সময়টা কাটিয়েছি অন্যের ভিটায়। ইউএনও সার আমারে একটা পাকা ঘর দিয়া আমার মতো গরিব মানুষের উপকার করছেন। আজ এই ঘরে পোলাপান নিয়ে ঈদ করতে পেরে আমরা খুব খুশি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান সাংবাদিকদের বলেন, মুজিববর্ষের ঘর গুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। ওখানে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা ভেবে ব্যক্তিগত উদ্দ্যেগে তাদের ঈদ আনন্দ দিতে আমি এ আয়োজন করেছি। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত, ওই শিশুদের কথা মাথায় রেখে ওখানে শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের।
এক ইঞ্চি জমি যেন খালি পড়ে না থাকে। প্রত্যেকেই যেন ওই জমিতে কাজ করেন। যেখানেই খালি জায়গা, সেখানেই উৎপাদনমুখী কাজ করতে হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশকে মাথায় রেখে এ উপজেলার ৫টি আবাসনের খালি জায়গা গুলো নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা শুরু করেছি। একদিকে যেমন আবাসনে বসবাসরত সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটবে, অন্যদিকে সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাদের।