আবুল কাশেম রুমন,সিলেটঃ
গ্যাস সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিলেটে চলমান পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করেছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।
সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রমিক নেতারা। পরে ওই বৈঠকে অংশ নেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এক ঘণ্টার অধিক সময় বৈঠকে ধর্মঘট তুলে নিতে সম্মত হন শ্রমিক নেতারা।
পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, গ্যাসের সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো। আজ সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন শ্রমিকেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও লোকাল বাসের দেখা নেই। বিক্ষিপ্তভাবে দুয়েকটি ছাড়া সিলেট থেকে দূরপাল্লার যানবাহনগুলোও ছেড়ে যাচ্ছে না । এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ যাত্রীরা। এ ছাড়া পর্যটন নগরী সিলেটে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকেরাও আটকা পড়েছেন।
পরিবহন ধর্মঘট সফল করতে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সকাল থেকেই অবস্থান নেন শ্রমিকেরা। বিশেষ করে নগরীর প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমার তেঁতলীবাজার বাইপাস, চন্ডিপুল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কের বটেশ্বর বাজার, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের বাইপাস এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের গাড়ি আটকে দিতে দেখা যায়। তবে পরীক্ষার্থী, রোগী ও বিদেশযাত্রীদের বহনকারী যান ধর্মঘটের আওতামুক্ত রয়েছে বলে জানান শ্রমিকেরা।
এদিকে বিপাকে পড়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সকাল সোয়া ৯টার দিকে দক্ষিণ সুরমায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের পুলিশের ভ্যান গাড়িতে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় পুলিশ সদস্যরা।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানী নগর সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ থানার দুটি টিম বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়। জেলা পুলিশ জনগণের সেবায় সব সময় নিয়োজিত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমাদের থানা পুলিশকে আগে থেকেই বলে রাখা হয়েছে তাদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করার জন্য।
গত রবিবার নগরীর কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন করে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। মানববন্ধন থেকে নেতারা গ্যাসের সংকট নিরসন করা, পরিবহন শ্রমিকদের ওপর বিভিন্ন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ পাঁচটি দাবি তোলেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নগরীতে মাইকিং করে পুনরায় ঘোষণা করে সংগঠনটি।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, সিলেটে বর্তমানে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। স্থানীয় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর ‘লিমিটি’ প্রতি মাসের ১৮-২০ দিন পর শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও গ্যাস পাচ্ছেন না অনেকে। এতে গাড়ি চালাতে পারছেন না চালকেরা। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে এ সমস্যা চলছে।
তারা আরও বলছেন, গত কয়েক বছরে গ্যাসের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়েই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
আজ সকালে শুরু হয়ে প্রায় আট ঘণ্টা অবরোধ পালন শেষে তা তুলে নেওয়ার ঘোষণা আসে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। তবে আমাদের দাবি পূরণ না হলে আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘তেল-গ্যাসে ভরপুর সিলেট। আর সেই সিলেটবাসীকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে এ সম্পদ থেকে। এটি সিলেট বিদ্বেষমূলক আচরণ। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় গাড়ি পুড়ানোসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় শ্রমিকদের হয়রানি করা হয়ে থাকে। এসব বন্ধের জন্য এ আন্দোলন। এ ছাড়াও আরও অনেক দাবি রয়েছে।’