নিশাত আনজুমান,আক্কেলপুরঃ
নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে সরাসরি অথবা মুঠোফোনে বিকাশের মাধ্যমে ঘুষ চেয়ে নেওয়া হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে। এমন অভিযোগ ওঠেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তবে এ সকল অভিযোগের টাকা সম্মানী ও পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়েছেন মর্মে স্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। তাছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতে জন প্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এছাড়াও সম্প্রতি এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতেও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিকট থেকে সরাসরি অথবা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিকট থেকে ২হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা চেয়ে নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
এসকল অভিযোগ অনুসন্ধানকালে, আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলামের টাকা চাওয়ার একাধিক অডিও ফোনআলাপের রের্কডিং আসে এই প্রতিবেদকের হাতে। যার একটি রের্কডিং এ শোনা যায়, একটি ফাইল পাঠাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অনেক ওয়েব সাইটে ক্লিক করতে হয়। তিনি বিকাশের মাধ্যমে তার নিজস্ব বিকাশ আকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতে বলেছেন।
শফিকুল ইসলাম চলতি বছরের গত ৫মে তারিখে পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলা থেকে আক্কেলপুরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তার বিভিন্ন অনিয়মের জনশ্রুতি রয়েছে ওই উপজেলায় ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এনটিআরসিএ থেকে ৩১ জন শিক্ষক এই উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
গত ০৯ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওএম/৭৪/ম/১৪-৩১২৩ নং স্মারকে এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধে একটি পত্র জারি করা হয়। সেই পত্রে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায় হতে অনলাইনে এমপিও সংশ্লিষ্ট আবেদন অগ্রায়ণের ক্ষেত্রেও কোন ধরণের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য বিধি বিধানের আলোকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এই উপজেলায় কর্মরত একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তিনি সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ, এমপিওভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঘুষ বাণিজ্য। কর্মকর্তা হওয়ায় নিরুপায় হয়ে বাধ্য হয়ে তাকে দিতে হয় টাকা।
আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘এনটিআরসিএ’র ৪র্থ গণ বিজ্ঞপ্তির সুপারিশে আমার প্রতিষ্ঠানে ৩ জন শিক্ষক যোগদান করে তারা অনলাইনে এমপিও আবেদন করেন। তিনি তার অফিসে আমাকে ডেকে নিয়ে তিনজনের ফাইল অনলাইনে পাঠাতে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন’।
উপজেলার আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম বলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। সেই নিয়োগে তিনি টাকা নিয়েছেন। পরে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ফোনে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন এবং সেই টাকা বিকাশে দিতে বলেন। পরবর্তীতে প্রার্থী তাকে নতুন চাকুরী হওয়ায় ভয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিয়েছে’।
এ সকল বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে গেলে দেখা যায় তিনি কার্যালয়ে অনুপস্থিত। পরবর্তীতে বেলা ১১টার পরে তিনি নিজ কার্যালয়ে আসেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম অভিযোগ স্বীকার করে বলেন,‘ অনলাইনে এমপিও ফাইল পাঠাতে অফিস চলাকালীন সময়ের বাইরেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এটি এক প্রকার পারিশ্রমিক হিসেবে নেওয়া হয় । তবে কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা নিয়োগের সময়ে প্রতিষ্ঠানে গেলে তারা আমাদের কিছু সম্মানী দেয় ’।
জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার শিশির কুমার উপাধ্যায় মুঠোফোনে বলেন,‘ এমপিও ফাইল পাঠানো তার কাজের মধ্যে পড়ে। তার এসকল বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।