রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ী ঢলে রাজশাহীর বাগমারায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বাল্পকালীন বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যায় কৃষকের নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেত ও বিলের ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
এছাড়া অনেক কৃষকের মরিচের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে এক লাফে মরিচের দাম দুইশ টাকা ছড়িয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কালের বৃষ্টিপাত পাহাড়ী ঢল ও ভারতের গজালডোবা ও তিস্তার গেট খুলে দেওয়ায় উজান থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে ধেয়ে আসছে তিস্তার পানি। এই তিস্তার শাখা নদী আত্রাই । আর আত্রাইয়ের শাখা নদী বাগমারার ফকিরানী ও বারনই নাটোরের সিংড়া হয়ে মিশেছে যমুনায়। যে কারণে আত্রাই নদীর পানি বাড়ার কারণে বেড়েছে বাগমারার ফকিরানি ও বারনই নদীর পানি। এভাবে হাটাৎ বন্যার পানি বাড়ায় এই নদী সংলগ্ন বিলগুলো এরিমধ্যে পানিতে ভরে ওঠেছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, যে হারে নদীর পানি বেড়েছে, তাতে এই বন্যায় বিলগুলো প্লাবিত হওয়া শুরু হয়েছে। তবে নদী খনন করার কারণে বন্যার তীব্র আকার ধারন করছে না। তাদের মতে, এবার ফকিরানী ও বারনই নদীর প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার খনন করার কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকা বিলগুলো প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে নদীর ¯্রােত। তাই দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। এদিকে আকর্ষিক বন্যার কারণে বাগমারার বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে অনেক কৃষক বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে সবজি চাষীদের দূর্ভোগের শেষ নেই। বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকায় কৃষকরা ভালোই সবজির দাম পাচ্ছিল। এরই মধ্যে তাদের সেই সবজির ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার বাজারে সবধরণের সবজির দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কসবা মহল্লার কৃষক আবেদ আলী জানান, তিনি এবার পুঁশাক, ঢেঁরশ ও পটল চাষ করেছেন। জমিগুলো নদী সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে পানি ওঠে সব ডুবে গেছে। যে কারণে বাজারে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফকিরানী নদী খনন করায় সেই নদীর মাটি ভরাট দিয়ে নদী সংলগ্ন এলাকায় কলা ও বিভিন্ন জাতের আমের বাগান করেছেন ভবানীগঞ্জের ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ। তিনি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে ওই বাগান গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে নদীর পানি উপছিয়ে আব্দুল মজিদের বাগানে প্রবেশ করায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এভাবে অন্তত দশ দিনের বেশি পানিতে বাগান ডুবে থাকলে গাছগুলো মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল রাজ্জাক জানান, বাগমারায় বন্যার বিপদজনক পরিস্থিতি এখনও আসেনি। আমরা কৃষকদের সাথে সার্বক্ষনিত যোগাযোগ বজায় রাখছি। স্থানীয় কৃষকরা এবার ব্রি ধান ৫১/৫২ এবং বিআর-২২ সহ বিভিন্ন বন্যা সহনীয় জাতের ধান আবাদ করেছেন। এই ধানগুলো পানিতে ডুবে ২০/২২ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। আমরা কৃষকদের এসব বন্যা সহনীয় জাতের ধান আবাদ করতে উৎসাহিত করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব আল রানা জানান, বন্যা সহ যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুবুল ইসলাম জানান, বন্যা পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি। কোন সমস্যা দেখা দিলে সেই মত প্রস্তুতি গ্রহন করব।