নিশাত আনজুমান,জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে জাতীয় শিক্ষাক্রম বিস্তরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ সরবরাহসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা। গত ০২ নভেম্বর এবং ২২ অক্টোবর উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে দুইটি লিখিত অভিযোগ দেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাক্রম বিস্তরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ব্যাগ বাবদ ৫ শত ও উপকরণ ক্রয় বাবদ ৫ শত টাকা বরাদ্দ থাকলেও উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলম সর্বোচ্চ ২৮০ টাকার ব্যাগ সরবরাহ করেছেন। এ ছাড়া উপকরণ হিসাবে দিয়েছেন ৩৫ টাকার নোট প্যাড, ৩০ টাকার একটি কলম, ৮ টাকার পেনসিল, ৫ টাকার ইরেজার, ৫ টাকার সার্পনার, ৫ টাকার নেম কার্ড এবং ১২০ টাকার প্রশিক্ষণ তথ্যপত্র।
এগুলো উপকরণের সর্বমোট মূল্য দাঁড়ায় ২০৮ টাকা এবং একটি ব্যাগ (মহিলা প্রশিক্ষণার্থীদের লেডিস ব্যাগ) ২৮০ টাকাসহ সর্বমোট ৪৮৮ টাকার প্রশিক্ষণ উপকরণ সরবরাহ করেছেন। এর সাথে ১০ শতাংশ সরকারি ভ্যাট ৪৮.৮০ টাকা যোগ করলে তা দাঁড়ায় ৫৩৬.৮০ টাকা। অথচ একজন প্রশিক্ষণার্থীর সর্বমোট বরাদ্দ ব্যাগ ও উপকরণ মিলে (৫০০+৫০০)= ১ হাজার টাকা। উপকরণগুলো নিম্ন মানের হওয়াই প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে চরমভাবে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষকরা উল্লেখ করেছেন, তিনি একই ব্যক্তি কোর্স কো—অর্ডিনেটর ও প্রশিক্ষক হিসেবে একই ব্যাচে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া দুই খাতের বরাদ্দ থেকেই তিনি অন্যের নাম দিয়ে জাল স্বাক্ষরে অর্থ উত্তোলন করেন। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। তার অফিসে এক কর্মচারী কর্মরত থাকলেও তিনি প্রতি ব্যাচে দুইজন কর্মচারী দেখিয়ে বিল উত্তোলন করেছেন। তিনি ১ম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে নিজেকে মাছ ও বালু ব্যাবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেওয়াসহ প্রভৃতি বিষয়ে ০২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন শিক্ষকরা।
এদিকে একই বিষয়গুলি উল্লেখ করে গত ২২ অক্টোবর উপজেলার কাশিড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
উপজেলার জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ব্যাগ বাবদ ৫ শত টাকা কেটে নেয়, কিন্তু যে ব্যাগ দিয়েছে তার মুল্য ৫ শত টাকা তো দূরের কথা অর্ধেক মূল্যও হবে না। সেটি খুব নিম্নমানের। পক্ষান্তরে এটি সরবরাহ করে তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের অপমান করেছেন। অন্যান্য সমগ্রী গুলোর মুল্যও ৫ শত টাকা হবে না। অথচ আমাদের ব্যাগ ও উপকরণ বাবদ ১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ কাজ করছে’।
গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইউনুস আলী বলেন, ‘প্রশিক্ষণে আমাদের প্রাপ্য অনুযায়ী উপকরণ বিতরণ করা হয়নি। অত্যন্ত নিম্ন মানের এবং কম দামে ক্রয়কৃত উপকরণ ও ব্যাগ দিয়েছে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট সদর উপজেলাতে ২ শত ৫০ টাকা টি.এ বিল দিলেও তিনি আমাদের ২০০ টাকা দিয়েছেন। এটাতেও তিনি অনিয়ম করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকরা অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি যেহেতু উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সেহেতু আমরা কিছু বলতেও পারিনি। ভান্ডারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর মো. রেজাউন নবী বলেন, ‘প্রশিক্ষণে নিম্ন মানের সামগ্রী দেওয়াই আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করছি। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় আর্থিক বিষয়েও নানা অনয়িম করেছেন। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি’।
এ বিষয়ে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রশিক্ষণ শুরুকালীন প্রথম ব্যাচে যে উপকরণ গুলো দেওয়া হয়েছে তা নিম্ন মানেরই হয়েছে তা আমি স্বীকার করছি। জেলা থেকে সকল উপজেলাতেই একই মানের সামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়াই ওই উপকরণগুলো দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে পরবর্তী ব্যাচ থেকে উন্নতমানের ব্যাগ এবং উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অন্যান্য অভিযোগগুলো আদৌ সত্য নয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে আমার কাছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পৃথক দুইটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগগুলো তদন্ত করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভুমি)—কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয ব্যবস্থা নেওয়া হবে।