এস এম নাসির মাহমুদ,আমতলী প্রতিনিধিঃ
আমতলী পৌরসভার অভ্যন্তরে অবস্থিত চাওড়া খাল নামে একটি লেকের মাছ মরে পচা দুর্গন্ধের কারনে লেকের পারে বসবাসরত তিন ওয়ার্ডের কয়েক’শ পরিবারের বসবাস এখন দুরহ হয়ে পড়েছে। অজ্ঞাত কারনে মাসাধিকাল ধরে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার মাছ মরে ভেসে উঠছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ইজারাদার মরা মাছ সময়মত অপসারন না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমতলী পৌরসভার দুই, তিন ও ছয় নং ওয়ার্ডের মাঝ খানে এবং পৌরভবনের সামনের ৩২ একর আয়াতনের একটি বিশাল লেক রয়েছে। লেকটি চাওড়া খাল নামে পরিচিত।
লেকটি স্থানীয় মৎস্য চাষী মিরন খান নামে এক মাছ চাষী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছেন। মাসাধিকাল ধরে প্রতিদিন তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, মৃগেল ও রুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার মাছ অজ্ঞাত কারনে মরে ভেসে উঠছে এবং পঁচে গন্ধ ছড়াচ্ছে। পচা মাছের তীব্র গন্ধে এখন দুই পারে বসবাসরত কয়েকশ পরিবারের বসবাস করাই দায় হয়ে পড়েছে।
এছাড়া এই লেকের উত্তর এবং পূর্ব পাড়ে রয়েছে ২টি সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পৌরবাসী এবং পথচারী চলাচল করে। পচা মাছের গন্ধে এখন নাক চেপে চলাচল করতে হয়। তাছাড়া এই লেকের দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে আমতলী – কলাপাড়া মহাসড়ক। এই সড়কের পাসে রয়েছে শতাধিক দোকান। এই দোকানের ব্যবসায়ীরাও এখন দুর্ঘন্ধের কারনে ঠিকমত তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। লেকের দুই পারে বসবাসরত এবং শহরের শত শত মানুষ প্রতিদিন এই লেকের পানি নিত্য দিনের কাজে ব্যবহারসহ গোসল করে থাকেন। মাসাধিকাল ধরে পচা মাছের কারনে পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা পড়েছেন মহাবিপদে।
শনিবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার মরা মাছ পানিতে ভাসছে। লেকের সকল জায়গায় মরা মাছ ভাসছে এবং পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারনে লেকের পারে বসবাসরত বসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা পড়েছে মহা বিপদে। পঁচা মাছের গন্ধে বাসা বাড়ি এবং দোকান পাটে বসে ব্যবসা করাই তাদের দায় হয়ে পড়েছে।
লেকের পাড়ের বাসিন্দা বীরাজ কুমার বিশ্বাস জানান, পচা মাছের গন্ধে এখন বাসা বাড়িতে থাকা যায় না। সব সময় নাক চেপে রাখতে হয়।
পূর্ব পাড়ের আরেক বাসিন্দা প্রশান্ত কুমার মজুমদার বলেন, মাছ পচে পানি নষ্ট হওয়ার কারনে এখন কোন কাজে ব্যবহার করা যায় না।
দক্ষিণ পাড়ের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, সবসময় দোকানে বসে থাকতে হয়। মাছ পচা গন্ধে দোকানে বসাই এখন মুশকিল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা অব্দুস ছালাম অভিযোগ করে বলেন, ইজারাদার শুধু লাভের কথা ভাবেন। লেকের পানিতে মাছ মরে দুর্গন্ধ ছড়াছে সেগুলো তিনি অপসানর করেন না। ফলে লেকের পারে বসবাসরত পরিবারগুলোর পঁচা গন্ধের কারনে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আরেক বাসিন্দা বদিউল আলম বাদল মুন্সি বলেন, বাতাসে এখন শুধু মাছের পচা গন্ধ পাই। তিনি বলেন, লেকের পানি এখন আর কেহ নিত্য দিনের কাজে ব্যবহার করতে পারে না। সে দিকে ইজাদারের নজর নেই।
ইজারাদার মো.মিরন খান বলেন, লেকের তিন পাড়ের পরিবারগুলো তাদের সকল বর্জ পানিতে ফালানোর কারনে পানি নষ্ট হয়ে গ্যাস সৃষ্টি হওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মরা মাছ থেকে যাতে দুর্গন্ধ ছড়াতে না পারে সেজন্য মাছগুলো দ্রুত অপসারন করা হবে।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সর্দার বলেন, এ্যামোনিয়া গ্যাসের কারনে মাছ মারা যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখে মাছ চাষীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
আমতলী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান বলেন, দুর্গন্ধ ছড়ানোর আগেই মরা মাছ লেকের পানি থেকে অপসারনের জন্য ইজারাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাহাতে পৌরবাসীর কোন সমস্যা না হয়।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, পৌরবাসীর জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পঁচা মাছ দ্রুত অপসারনের জন্য ইজারাদারকে নির্দেশ প্রদান করা হবে।