
বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনায় আপন শ্যালিকাকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে নারীকে জখম ও দুই শিশুকে হত্যার দায়ে আসামি দুলাভাই ইলিয়াসকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দিয়েছেন।
আসামি বরগুনা সদর উপজেলার আয়লাপাতাকাটা ইউনিয়নের পূর্ব কেওরাবুনিয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন পহলানের ছেলে মো. ইলিয়াস পহলান (৩৫)। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল।
রাষ্ট্র পক্ষে বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ফুলকুড়ি ইউনিয়নের গুদিঘাটা গ্রামে গৃহবধূ রিগানের ভাই রিপন সরদার বরগুনা থানায় ২০২৩ সালে ৪ আগস্ট সকালে অভিযোগ করেন, তার বোন রিগান তিন বছরের শিশু তাইফাকে নিয়ে তাদের পৈত্রিক ভিটার পশ্চিম ভিটার টিনের বসত ঘরের বসবাস করেন। পাকুরগাছিয়া গ্রামের খবির হাওলাদারের ছেলে মো. হাফিজুল (১০) তার বোনের ঘরে থেকে রোডপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা করে। রাতে বাদির বোনকে হাফিজুল পাহারা দেয়। ঘটনার দিন ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট রাত ১২ টার পরে হাফিজুল বাদির বোনের ঘরে ঘুমায়। পরের দিন সকালে বাদির বড় বোন মোর্শেদা ফোনে তাকে জানায়, কে বা কারা রাতের অন্ধকারে মো. হাফিজুলকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। বাদির বোন রিগান ও তার শিশু কন্যা তাইফাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চিকিৎসারত অবস্থায় রিগানের সন্তান তাইফাও মারা যায়। বাদি সংবাদ পেয়ে ৪ আগস্ট বাড়ি এসে বরগুনা থানায় অভিযোগ দেয়। বাদি আরও অভিযোগ করে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মো. ইলিয়াস পহলান তার বড় বোনের জামাতা। আমার বোন রিগানকে ধর্ষণ করতে ইলিয়াস পহলান রিগানের বসত ঘরে কৌশলে প্রবেশ করে। রিগান ডাক চিৎকার দিলে হাফিজুলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রিগানকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায় হাফিজুল। এ সময় ইলিয়াস ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তিনজনকে জখম করে। রিগান মারাত্মক আহত হলেও দুই শিশু মারা যায়।
পুলিশ তদন্ত করে ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। আদালত তিনটি ধারায় বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়। রায়ে উল্লেখ করেন, ইলিয়াস ভিকটিম মোসা. রিগানকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করতে বাধার সম্মুখীন হয়ে সেখানে উপস্থিত ১০ বছরের শিশু হাফিজুল ও তিন বছরের শিশু তাইফাকে উপর্যুপরি একাধিক কোপ দিয়ে হত্যা করে। আসামি দুটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে গলায় রশি দ্বারা ঝুলিয়ে ফাঁসি (মৃত্যুদণ্ড) কার্যকর করতে হবে।
রাষ্ট্র পক্ষে বিশেষ পিপি রনজুয়ারা সিপু বলেন, এই যুগান্তকারী রায়ে বাদি ও রাষ্ট্র সন্তুষ্ট। আসামীর আইনজীবী না থাকায় আদালত আইনজীবী এম মজিবুল হক কিসলুকে ইলিয়াসের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেয়।
তিনি বলেন, আমি সাধ্যমতো মামলা পরিচালনা করেছি। আসামি জেল কোড অনুযায়ী হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন।