ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
২৪ ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়া। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতিও তাই। তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে রাজনৈতিকভাবে সরকারেরও সদিচ্ছা রয়েছে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার। তিনি তার ভাষণে বলেন ভোটের আগে কি হল তা মানুষ ভুলে যায় কিন্তু ভোটের দিন লক্ষ্য রাখতে হবে কোন জোর জুলুম যেন না হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে অনিয়মের সম্ভবনা কম কারণ হিসেবে তিনি জানান পাঁচ বাহিনীর লোক থাকলে সবাইকে হাত করা যায় না। আনসার, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ ১৫ থেকে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্রের বাইরে ভারসাম্য রক্ষা করবে। যদি তারা কোন কারণে ব্যর্থ হয় তবে রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্ব নিয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ওই কেন্দ্রে ১০ বার ভোট নেওয়া হবে।
আচরণ বিধি ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান অতিথি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটি হলো ভোটের দিন। ঐদিনের নির্বাচনি পরিবেশ কেমন স্বচ্ছ ছিল, দৃশ্যমান ছিল, জবাবদিহিতামূলক ছিল, সেটাই দেশবাসীর কাছে প্রতীয়মান হবে। এমনকি সেটা বহির্বিশ্বের কাছেও প্রমাণ রাখবে যা সফল নির্বাচনের প্রতীক। সর্বজনীন নির্বাচনি আস্থা হয়তোবা এখনো গড়ে উঠতে পারেনি, নির্বাচনি সংশয় এখনো কাটেনি। কিন্তু কর্ম ও সততার দ্বারা আমরা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনি ফলাফল দিতে চাই। জনগণ ও বিশ্বের কাছে শতভাগ বিশ্বাসযোগ্য আস্থা অর্জন করতে চাই। এই জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের দৃশ্যমান ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে নির্বাচনি সংবাদ নির্ভয়ে জনগণকে জানানোর উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির ভাষণে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, একটি স্বচ্ছ, সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এমন একটি জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন আমরা অনুষ্ঠিত করতে চাই যার পেছনে কোনো বৈদেশিক জল্পনা কল্পনা থাকবেনা। দ্বিধা, প্রলোভন, অনুরোধ, অভিযোগ সবকিছুর উর্ধ্বে নির্বাচনি আয়োজন করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্বের সম্মানিত সদস্য, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কাছে আপনার আমার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে।
সভাপতির ভাষণে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, নির্বাচনের দিনটিতে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমরা। নিরপেক্ষতা, সহনশীলতা, সহযোগিতা, সততার সহিত আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশবাসীসহ বিশ্বের কাছে নির্বাচনি পরিবেশ গর্বের সাথে তুলে ধরতে চাই।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষ ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে ময়মনসিংহ জেলার সকল সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণের সাথে মতবিনিময় করেন সিইসি। তবে সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে দুপুর সোয়া ১২টায় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে তিনি বেরিয়ে যান। জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে ৭১জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লড়ছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৬টি জেলা ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মাঠ প্রশাসনের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, রেঞ্জ ডিআইজিসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিজিবি’র ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, এনএসআই প্রতিনিধি, র্যাবের প্রতিনিধি, জেলা কমান্ডারসহ আনসার ও ভিডিপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন নির্বাচন কর্মকর্তাবৃন্দ, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ, গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ।