তোবারক হোসেন খোকন,দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ
পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি ছিলেন রাজমিস্ত্রী মাসুম বিল্লাহ (২৪)। তাঁর উপার্জনের টাকাতেই চলতো সংসার। বাবা-মা, বোন ও স্ত্রী নিয়েই ছিল ছোট্ট সংসার। আয় অল্প হলেও এতেই খুশি ছিল পরিবারের সবাই। সব মিলিয়ে ছোট্ট সংসারটি চলছিল অনেকটাই হাসি-খুশিতেই। মাসুমের শরীরে লাগা দুটি গুলিতে এ পরিবারের সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেলো।
গত ০৫ আগস্ট সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ নেয় মাসুম। আন্দোলন চলাকালীন গাজীপুরের মাওনা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। পরে সেখানকার লোকজন থাকে ভালুকা হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে ওইদিন রাতেই গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা নলুয়াপাড়া গ্রামে চলে আসেন। পরদিন ০৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
গ্রামের বাড়িতে সেখানে বাবা-মা, দুই বোন ও স্ত্রী নিয়েই বসবাস ছিল তার। তবে মাসুম বিল্লাাহ জীবিকার তাগিদে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন মাওনা নয়নপুরে। বাবা সাইদুর রহমান দরিদ্র কৃষক। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মাসুম দ্বিতীয়। নিজে বেশি পড়াশোনা করতে না পারলেও ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলনে প্রায় সময়ই গিয়ে মিছিল করতো মাসুম।
মাসুমের এমন মৃত্যুতে তার পরিবার ও স্বজনসহ পুরো এলাকায় বইছে শোকের মাতম। বুধবার (৭ আগষ্ট) বিকেলে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের মৃত্যুতে পাগলের মতো প্রলাপ করছেন মা। তার পাশে বসে আছেন মাসুমে স্ত্রী। স্বামী হারিয়ে শোকে যেন পাথর তিনি। বার বার কান্নায় আহাজারি করছেন বোনেরা। তার বাবা ছেলের কবরস্থানে গিয়ে ঘুরপাকা খাচ্ছেন। এই সময় উপস্থিত স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবার হওয়ায় মাদরাসায় ভর্তি হলেও পড়াশোনা করা হয়নি মাসুমের। নিজেদের কৃষি জমি নেই, বাবা অন্যের জমিতে ধান চাষ করেন। সংসারের হাল ধরতে অল্প বয়সেই কাজে লেগে যান মাসুম। তার উপার্জনের টাকায় সংসার চালানোসহ তিন বোনকে বিয়ে দিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। প্রায় দুই বছর আগে নিজেও বিয়ে করেছেন। পরিবার নিয়ে স্বপ্ন ছিল অনেককিছু। দুটি গুলিতে সবকিছুই শেষ হয়ে গেলো। তাঁকে হারিয়ে পরিবারেরও সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
কান্না জড়িত কন্ঠে মাসুমের মা মুর্শিদা আক্তার যুগান্তর কে বলেন,”আমার ছেলেরে মাইরালছে। আমি কেমনে বাঁচবাম, আমরার মাথার উপরতে বটগাছট সইরা গেছে গ্যাছে।’’ এখন আর আমাদের দেখার মতো কেউ রইল নাই, আর ভালামন্দ খাইতে পারতাম না। আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।